আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় নীলফামারী জেলার নদ-নদী, নীলফামারী জেলা বাংলাদেশের ৮টি বিভাগের মধ্যে রংপুর বিভাগের অন্তর্গত ।
নীলফামারী জেলা সর্ম্পকে কিছু তথ্যঃ-
নীলফামারী জেলা বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের একটি জেলা (দ্বিতীয় স্তরের প্রশাসনিক ইউনিট)। এটি রংপুর বিভাগের (বাংলাদেশের আটটি বিভাগের একটি যা ২০১০ খ্রিষ্টাব্দের ২৫ জানুয়ারিতে সপ্তম বিভাগ হিসাবে গঠিত হয়) আটটি জেলার একটি অন্যতম সীমান্তঘেষা জেলা। এ জেলার সদর বা রাজধানীর নামও নীলফামারী। নীলফামারী জেলার উত্তর সীমান্তে ভারতের জলপাইগুড়ি জেলা এবং অন্য দিকে লালমনিরহাট জেলা, রংপুর জেলা, দিনাজপুর জেলা ও পঞ্চগড় জেলা অবস্থিত।
নীলফামারী জেলাকে নীলের দেশ বলা হয়। এই জেলার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও ভূ-সংস্থান বেশ সমৃদ্ধ যা অন্যান্য জেলা থেকে এই জেলাকে কিছুটা হলেও আলাদা করেছে। জেলার উত্তর দিক উচু ও খরা পিরিত অঞ্চল, পূর্ব দিক তিস্তার বালুকাময় এলাকা, এই উচু ও বালুময় ভূমি ধীরে ধীরে দক্ষিণপশ্চিম দিকে উর্বর কৃষি জমিতে পরিণত হয়েছে। নীলফামারী অতীত ইতিহাসের অনেক সাক্ষী বহন করে। এ জেলায় সত্যপীরের গান, হাঁস খেলা, মাছ খেলাসহ অনেক উৎসব ও মেলার আয়োজন হয়।
নীলফামারী জেলার নদ-নদী:-
নীলফামারী জেলার উপর দিয়ে তিস্তা, বুড়িতিস্তা, ইছামতি, যমুনেশ্বরী, ধুম, কুমলাই, চাড়ালকাটা, সর্বমঙ্গলা, সালকী, চিকলি, দেওনাই সহ অনকে নদ-নদী প্রবাহিত হয়েছে। ও গুলির মধ্যে প্রধান নদীগুলো উৎপন্ন হয়েছে হিমালয় এবং আসামের পার্বত্য এলাকা থেকে। প্রধান নদীর শাখা নদীগুলো জালের মতো বিছিয়ে আছে নীলফামারীর বুকে।
তিস্তা নদী বাংলাদেশ-ভারতের একটি আন্তঃসীমান্ত নদী। এটি ভারতের সিকিম ও পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য ও বাংলাদেশের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত একটি নদী। তিস্তা সিকিম ও পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ি বিভাগের প্রধান নদী। একে সিকিম ও উত্তরবঙ্গের জীবনরেখাও বলা হয়। সিকিম ও পশ্চিমবঙ্গের উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার পর বাংলাদেশে প্রবেশ করে তিস্তা ব্রহ্মপুত্র নদের সঙ্গে মিলিত হয়েছে। বাংলাদেশ জল উন্নয়ন বোর্ড বা “পাউবো” কর্তৃক তিস্তা নদীর প্রদত্ত পরিচিতি নম্বর উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের নদী নং ৫২।
তিস্তা নদীর ইতিহাস:-
অষ্টাদশ শতকের প্রায় শেষ পর্যন্ত এই ধারাটি বিভিন্ন নদীপ্রবাহের মাধ্যমে গঙ্গা নদীতে প্রবাহিত হতো। ১৭৮৭ খ্রিষ্টাব্দের অতিবৃষ্টি একটি ব্যাপক বন্যার সৃষ্টি করেছিল এবং সেই সময় নদীটি গতিপথ পরিবর্তন করে লালমনিরহাট, রংপুর, কুড়িগ্রাম এবং গাইবান্ধা জেলার মধ্যদিয়ে প্রবাহিত হয়ে চিলমারী নদীবন্দরের দক্ষিণে ব্রহ্মপুত্র নদে পতিত হয়। তিস্তা নদীর সর্বমোট দৈর্ঘ্য ৩১৫ কিমি, তার মধ্যে ১১৫ কিমি বাংলাদেশ ভূখণ্ডে অবস্থিত। তিস্তা একসময় করতোয়া নদীর মাধ্যমে গঙ্গার সঙ্গে সংযুক্ত ছিল এবং এর অংশবিশেষ এখনও বুড়ি তিস্তা নদী নামে পরিচিত।
তিস্তার মাসিক গড় জল অপসারণের পরিমাণ ২,৪৩০ কিউসেক। ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দে তিস্তার ভারতীয় অংশে গজলডোবায় স্থাপিত বাঁধের সবগুলি গেটবন্ধ বন্ধ করে দেয়া হলে তিস্তা নদীর বাংলাদেশ অংশে জলপ্রবাহ শূন্যে নেমে আসে।
এর ফলে বাংলাদেশের ১২৫ কিলোমিটার দীর্ঘ তিস্তা অববাহিকায় মানুষের জীবন যাত্রা স্থবির হয়ে পড়ে। এর প্রতিবাদে এপ্রিল মাসে (২০১৪) বাংলাদেশে একটি প্রতিবাদী জনযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। এই জনযাত্রার মুখে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ কিছু জল ছাড়লে বাংলাদেশের ডালিয়া পয়েন্টে জল স্বল্প সময়ের জন্য উল্লেখযেোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়।
আরও পড়ূনঃ

