৫ বছর পর চালু হলেও ভরসা অবসরে যাওয়া কর্মীরা,নীলফামারী সৈয়দপুর উপজেলায় দীর্ঘ পাঁচ বছর বন্ধ থাকার পর চালু হয়েছে এশিয়া মহাদেশের প্রথম স্থাপিত ও দেশের একমাত্র রেলওয়ে সেতু কারখানা। জনবল সংকটে বন্ধ হওয়া কারখানাটিতে অবসরে যাওয়া পাঁচজন আর সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত ১১ কর্মী নিয়ে শুরু হয়েছে উৎপাদন।কর্তৃপক্ষ বলছে, প্রবীণ পাঁচজনই এখন ভরসা। তারা নবীনদের শেখাবেন। শিগগির শূন্য পদ পূরণ করে পুরোদমে উৎপাদন শুরু করবে কারখানাটি।

৫ বছর পর চালু হলেও ভরসা অবসরে যাওয়া কর্মীরা
৯৯১ সালে তৎকালীন সরকার রেলওয়ের ব্যয় সংকোচন নীতি গ্রহণ করে আর ১৯৯২ সালে গোল্ডেন হ্যান্ডশেক ঘোষণা দিলে ওই সুবিধা নিয়ে চাকরি ছেড়ে অবসরে যান অনেক শ্রমিক-কর্মচারী। এতেই মুখ থুবড়ে পড়ে কারখানাটি৷ গোল্ডেন হ্যান্ডশেক সুবিধা নেওয়ার পর কারখানাটিতে অবশিষ্ট থাকে মাত্র ছয়জন শ্রমিক-কর্মচারী। ফলে ২০১৪ সালে কারখানাটি অস্থায়ী বন্ধ ঘোষণা হয়। ২০১৮ সালের শেষ দিকে কারখানাটির কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। কারখানাটি দেখার দায়িত্বে রাখা হয় তিনজনকে।
কারখানা ঘুরে দেখা যায়, দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার ফলে জমে যাওয়া ময়লা আবর্জনার স্তূপ ও প্ল্যাটফর্ম শেডসহ আশপাশের জঙ্গল পরিষ্কার করা হয়েছে। পড়ে থাকা লোহার ইস্পাত ব্যবহার যোগ্যকরণ ও মেশিনগুলো সচলে কাজ করছেন শ্রমিকরা। ১১ জন সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মীকে কাজ শেখাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রবীণ পাঁচ কর্মী। বানানো হচ্ছে সিসি ক্রাপট, ব্রিজ শেডসহ রেল ব্রিজের অন্য উপকরণ। যা দুর্যোগপূর্ণ সময় দেশের রেল যোগাযোগ অব্যাহত রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

রেলের সেবা আধুনিকায়ন ও সেবার মান বাড়ার লক্ষ্যে নতুনদের প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ কর্মী হিসেবে গড়ে তুলতে চান প্রবীণ শ্রমিকরা। সঙ্গে দক্ষ জনশক্তি হিসবে গড়ে উঠতে চান সদ্য নিয়োগ পাওয়া খালাসিরা।প্রবীণ কর্মী আব্দুর রউপ বলেন, ‘এখানে আমরা আগে যখন কাজ করেছি একটা উৎসব ছিল। আমরা যেগুলো উৎপাদন করতাম তা এশিয়া মহাদেশে প্রথম ছিল। পিএক্স পয়েন্টিং ক্রসিং আমরাই প্রথম বানিয়েছি এশিয়ায় মধ্যে। এমন গর্ব নিয়ে কাজ করতাম। কিন্তু অবসরে যেতে যেতে কাজ তো বন্ধ হয়ে গেলো। পুরনো স্মৃতি নিয়েই আবারও ফিরেছি। নতুনদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। আশা করি এরাই ভবিষ্যতে দেশের নাম বিদেশে পৌঁছাবে।’
অবসরপ্রাপ্ত কর্মী ওয়াহেদ আলী বলেন, ‘মেশিন শপ, পয়েন্টস অ্যান্ড ক্রসিং শপ ও গার্ডার ইয়ার্ড শপ নামে তিনটি ভাগে কারখানায় আমাদের উৎপাদন কাজ হতো। রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলের সব স্টেশনের প্ল্যাটফর্ম শেডের মালামাল, ব্রিজ গার্ডার, ট্রলি ও মোটরট্রলি মেরামত এবং তৈরি, মোটর গার্ডার, রেললাইনের পয়েন্ট অ্যান্ড ক্রসিং, পানির ট্যাংক, ফুটওভার ব্রিজের মালামাল, ট্যাং স্টেজিংসহ প্রায় শতাধিক মালামাল তৈরি করতাম আমরা। আমিও যোগ দিয়েছি। যতটা পারি নতুনদের শেখাবো।’
আরেক প্রবীণ কর্মী আক্তার হোসেন বলেন, ‘এটা আমাদের আনন্দের। বছরের পর বছর এখানে কাজ করেছি। কিন্তু মাঝে বন্ধ হয়ে গেলো। এখন আবার আসতে পেরে যা ভালো লাগছে তা বলে বোঝানো অসম্ভব। আমাদের সব জ্ঞান নতুনদের দিয়ে যাবো, যাতে ভবিষ্যতে আর এটি বন্ধ না হয়।’নতুন নিয়োগ পাওয়া রাকিবুল ইসলাম বলেন, ‘এখানে আমরা নতুনভাবে নিয়োগ পেয়েছি। আগের চাচারা আমাদের হাতে কলমে শেখাচ্ছেন। বর্তমানে আমরা সিসি ক্রাফট বানাচ্ছি৷ ধীরে ধীরে সব কাজ শিখবো।

রেলওয়ে সেতু কারখানার সহকারী প্রকৌশলী তহিদুল ইসলাম বলেন, লোকবলের অভাবে কারখানাটি ২০১৮ সালে বন্ধ হয়ে যায়। সম্প্রতি ১১ কর্মী নিয়োগ দিয়েছি। তাদের দক্ষ কারিগর হিসেবে গড়ে তোলার জন্য অবসরে যাওয়া পাঁচ শ্রমিককে আহ্বান জানালে তারা সাড়া দেন। বলতে পারেন তারাই এখন ভরসা। তারা নতুনদের কাজ শেখাচ্ছেন। এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছি আমরা। পাশাপাশি কারখানাটি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নের কাজ চলছে।তিনি আরও বলেন, আমাদের মেশিন অপারেটরের জন্য যেসব জনবল দরকার তা পাইনি৷ তবে শিগগির নিয়োগ দিয়ে কারখানার মেশিনগুলো চালু করা হবে।
আরও পড়ুন:
